এনবিআর বিলুপ্ত: রাজস্ব ভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা পরিষদের
সোমবার থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর বিলুপ্ত করে দুটি আলাদা বিভাগ করে যে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে তা বাতিলের দাবিতে রোববারও কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’।
কাস্টমস হাউস ও এলসি স্টেশনগুলো বাদে আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে বলে ঘোষণা দেয় পরিষদ।
শনিবার সকাল থেকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের পর বিকালে সংবাদ সম্মেলন করে কর্মবিরতি চালিয়ে চাওয়ার বিষয়টি জানানো হয়।
তবে, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে বলা হয়েছে।
তবে সোমবার থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত আয়কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।
এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠন ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ এর পূর্ব ঘোষিত আন্দোলনের মধ্যেই এদিন রাজস্ব ভবনে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ও র্যাব সদস্যদের উপস্থিতি দেখা যায়। এছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও ছিলেন বলে অনেকের মুখে শোনা গেছে।
এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি বাদানুবাদে না গেলেও ভবনের ভেতরে সংবাদ সম্মেলন করতে বাধা দেন; পরে ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন।
সেখানে পরিষদের দাবি ও কর্মসূচি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত কমিশনার এদিপ বিল্লাহ, উপ-কর কমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও সহকারী কর কমিশনার মো. ইশতিয়াক হোসেন।
বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি নিয়ে তারা বলেছেন, সকাল থেকেই এনবিআর ভবনের অভ্যন্তরে এবং বাইরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিতি রয়েছেন। এ বিষয়টি তাদের মনে নানা ধরনের প্রশ্নের উদ্রেক করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনা স্বাভাবিক রাখা এবং অর্থবছরের শেষ প্রান্তে রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম সচল রাখার স্বার্থে আমাদের মূল চারটি দাবি পূরণের বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা প্রদান করার জন্য আমরা সরকারকে সবিনয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি।”
“দাবি পূরণের ঘোষণা আসার সাথে সাথে আমরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিবো।”
বৃহস্পতিবার রাতে অর্থ মন্ত্রণালয় এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অধ্যাদেশে ‘প্রয়োজনীয় সংশোধন’ আনা হবে।
সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান কাঠামোতেই এনবিআরের সব কাজ চলবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
সংশোধন করে অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন ‘অনেক সময়সাপেক্ষ’ হওয়ার কথা তুলে ধরে এতে বলা হয়, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে এবং কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যমান ব্যবস্থায় সব কাজ করবেন।”
বাধার মুখে রাজস্ব ভবনের বাইরে সংবাদ সম্মেলন করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
তবে তাতে ‘সন্তুষ্ট’ নয় জানিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলেছে।
সেদিন রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ বলেছে, অধ্যাদেশ বাতিলসহ তাদের চার দাবির বিষয়ে ‘সুনির্দিষ্ট আশ্বাস’ মেলেনি। দাবি আদায়ে ‘পূর্বঘোষিত কর্মসূচি আগামী শনিবার থেকে চলবে’।
পরিষদের চারটি দাবি হল-
- জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।
- অবিলম্বে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে হবে।
- রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে।
- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনাপূর্বক প্রত্যাশী সংস্থা, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।
গত ১২ মে রাতে এনবিআর ভাগ করে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।
পরদিন থেকে অবস্থান ও কলমবিরতিসহ টানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন দেশের প্রধান রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটির কর্মীরা।
Post a Comment