প্রবাসীদের সম্মাননায় ফল মিলল: রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিহাস গড়ল দেশ
নীতিপত্রে বলা হয়েছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির পেছনে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ প্রবাসীদের বৈধ পথে অর্থ প্রেরণে উৎসাহ দিয়েছে, যার ফলে আয় বেড়েছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহে রেকর্ড, প্রবাসীদের স্বীকৃতি ও প্রণোদনার ইতিবাচক প্রভাব
২০২৪–২৫ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। সদ্যসমাপ্ত এই অর্থবছরে বাংলাদেশে এসেছে ৩০ হাজার ৩২ কোটি মার্কিন ডলার (৩০.৩২ বিলিয়ন USD) রেমিট্যান্স, যা আগের বছরের তুলনায় ২৬.৮ শতাংশ বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ প্রকাশিত মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতিপত্রে এই তথ্য উঠে এসেছে।
নীতিপত্রে বলা হয়, রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির পেছনে সরকারের একাধিক উদ্যোগ ভূমিকা রেখেছে। এর মধ্যে রয়েছে:
-
নগদ প্রণোদনা বৃদ্ধি (২.৫%),
-
বিধিনিষেধ সহজীকরণ,
-
প্রবাসীদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান, এবং
-
‘প্রবাসী লাউঞ্জ’-এর চালু হওয়া, যা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ২০২৩ সালের নভেম্বরে চালু হয়।
এই লাউঞ্জে প্রবাসীদের জন্য রয়েছে আরামদায়ক পরিবেশ, সাশ্রয়ী খাবার, নামাজের স্থান ও শিশু পরিচর্যার সুবিধা। এসব পদক্ষেপ প্রবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রের ইতিবাচক মনোভাব প্রতিফলিত করছে বলে নীতিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়া ক্রলিং পেগ এক্সচেঞ্জ রেট চালুর ফলে বৈধ ও অবৈধ চ্যানেলের মধ্যে ডলার রেটের ব্যবধান অনেকটাই কমে গেছে, যা প্রবাসীদের ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহারে উৎসাহিত করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে প্রতিমাসে ধারাবাহিকভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ ঊর্ধ্বমুখী ছিল:
-
জুলাই: ১৯১ কোটি ডলার
-
আগস্ট: ২২২ কোটি
-
সেপ্টেম্বর: ২৪০ কোটি
-
অক্টোবর: ২৩৯ কোটি
-
নভেম্বর: ২২০ কোটি
-
ডিসেম্বর: ২৬৪ কোটি
-
জানুয়ারি: ২১৯ কোটি
-
ফেব্রুয়ারি: ২৫৩ কোটি
-
মার্চ: ৩২৯ কোটি (রেকর্ড)
-
এপ্রিল: ২৭৫ কোটি
-
মে: ২৯৭ কোটি
-
জুন: ২৮১ কোটি ডলার
বিশেষ করে মার্চ মাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহ ঘটেছে, যেটি একটি নতুন মাসিক রেকর্ড।
এদিকে, বিএমইটি ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় দক্ষ শ্রমবাজার সম্প্রসারণে প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থানের নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। দক্ষতা উন্নয়নে “বাংলাদেশ–কোরিয়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র” ও অন্যান্য টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত প্রবাসী জিয়ানুল ইসলাম ইউএনবিকে জানান, “সরকারি উদ্যোগের ফলে এখন টাকা পাঠানো সহজ হয়েছে। যদি এই সহজ প্রক্রিয়া, ভালো রেট ও সেবা বজায় থাকে, তবে হুন্ডির মতো অবৈধ চ্যানেলের আর প্রয়োজন হবে না।”
তিনি আরও বলেন, “আগে হুন্ডির সিন্ডিকেট ছিল, এখন তা নেই। সরকার এই কঠোর অবস্থান বজায় রাখলে আমরা আরও স্বাচ্ছন্দ্যে বৈধ পথে টাকা পাঠাতে পারব।”
বিশ্লেষকদের মতে, বৈধ রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে এবং আমদানি ব্যয় সামাল দিতে সহজ হচ্ছে।
সূত্র : ইউএনবি

Post a Comment